পুরাতন বাঙলা
‘বাহতু ডোম্বী বাহ লো ডোম্বী বাটত ভইল উছারা। সদ্গুরু পাঅ পসাএ জাইব পুণু জিনউরা\’ অর্থাৎ, ডোমনি নদী পারাপার করছে, আর তারই মাধ্যমে সহজ সাধনার তীর্থধামে পৌঁছানোর আভাস সূচিত হচ্ছে।
পুরাতন বাঙলা
‘বাহতু ডোম্বী বাহ লো ডোম্বী বাটত ভইল উছারা। সদ্গুরু পাঅ পসাএ জাইব পুণু জিনউরা\’ অর্থাৎ, ডোমনি নদী পারাপার করছে, আর তারই মাধ্যমে সহজ সাধনার তীর্থধামে পৌঁছানোর আভাস সূচিত হচ্ছে।
ব্জ্রাবলি কথায় এই গান টি রবি ঠাকুর অল্প বয়সে লেখেন, কবি জয় দেবের অনুক্রনেঃ
গহন কুসুমকুঞ্জ-মাঝে মৃদুল মধুর বংশি বাজে,
বিসরি ত্রাস-লোকলাজে সজনি, আও আও লো।
পিনহ চারু নীল বাস, হৃদয়ে প্রণয়কুসুমরাশ,
হরিণনেত্রে বিমল হাস, কুঞ্জবনমে আও লো॥
ঢালে কুসুম সুরভভার, ঢালে বিহগ সুরবসার,
ঢালে ইন্দু অমৃতধার বিমল রজতভাতি রে।
মন্দ মন্দ ভৃঙ্গ গুঞ্জে, অযুত কুসুম কুঞ্জে কুঞ্জে
ফুটল সজনি, পুঞ্জে পুঞ্জে বকুল যূথি জাতি রে॥
দেখ, লো সখি, শ্যামরায় নয়নে প্রেম উথল যায় –
মধুর বদন অমৃতসদন চন্দ্রমায় নিন্দিছে।
আও আও সজনিবৃন্দ, হেরব সখি শ্রীগোবিন্দ –
শ্যামকো পদারবিন্দ ভানুসিংহ বন্দিছে॥
বঙ্গের চাউল যাইতো দূর জাভা বা মালায়াশিয়ার দ্বিপে। কুতুব্দিয়া অঞ্চলের বড় নৌকা ছিল বাহন, নাম "বালাম"। তখন থেকেই ঐ নাম শুরু হল এবং ঐ চাউল তা সাধারন এক চাল তারি নাম হয়ে গেল বালাম।
এই যান টি এখন বিলুপ্ত, কিন্তু চাউল টা এখনও বর্তমান।
ভোজনের বিদেশী সংযোগ
গিনি
বঙ্গের ভোজনে ছিল মাছ, ভাত, মুরগী, ডিম, সাক, দৈ, সন্দেশ ,রস গোল্লা, ক্ষীর।
পর্তুগীজ দিল আলু, নানান পেস্ট্রি, সমুসা।
স্প্যানিশ দিল সস, রুটির খাবার।
আফগানিরা দেয় বিরিয়ানী, কাবাব।
পার্সি দিল চায়ের দোকান।
বৃতিশ দিল রুটি, মাখন, জেলি।
কিন্তু এতো পরিচিত ডাল কে আনলো তা আজও জানা যায় না।
টপ্পা
গিনি
ভারত হইতে আরব আর পারস্যের ব্যবসায়িরা যখন রাতের আঁধারে দুর্গম পথে ঘরে ফেরার সময় যে গানের ধুন অল্প বাদ্য যন্ত্রের সাথে গাইতে গাইতে যাইতো, তাহাতে বিরহের টান বেশী থাকিত। কারন যখন মানুষ এক স্থানে কিছু দিন থাকে তখন তাহার মন কিছুটা হিলেও সে অঞ্চলের জন্য দুর্বল হয়। তাই টপ্পা গান গুলি ধীর আর বেদনার বা বিরহের। উটের চলার গতির সাথে অনেকটা মিল রাখিয়ায়ই এর সুর সৃষ্টি।
যেমন ,
"আর কবে হবেরে মিলন,
নে তোর গলায় মোর এ উপহার।
যদি এ ছিঁড়ে পরে ওরে
তবু রাখিস সুতায় বুকের পরে রে।"
রবি ঠাকুর বহু টপ্পা রচনা করিয়াছেন। এ ছাড়া সময় সময় অন্য গুনি জন ও টপ্পা দ্বারা গান রচনা করিয়া মানুষের মন কে উতলা করিয়াছেন।
বঙ্গ ভূমি গঠন প্রক্রিয়া
গিনি
যদি ভৌগো -লিক দিক বিবেচনা করা যায় তবে লক্ষ্য করা যায় যে সিলেটের তামাবিল অঞ্চলের উত্তরে উচা পাহার যা হিমালয় গিরির পাদ দেশ। আর অতি প্রাচীন কালে এখান থেকেই বঙ্গপ সাগরের শুরু ছিল। আজও তামাবিল আঞ্চলে গেলে দেখা যাবে বড় বড় পাথর পাহার গলে সিলেটের নিচু এলাকায় আসছে। ঐ সকল পাথরের যুগ যুগ জমার কারনেই ভূমি গঠন হয়। সেই ভূমিতে বঙ্গ উপজাতি যাযাবর বা বসত শুরু করে। সেখান থেকেই আজকের বঙ্গ দেশ।
এই ভূমি গঠন পদ্ধতি আরও দ্রুত হয় যখন সুন্দর বনের গাছ গাছরা আর তাঁর শিকড় পলি মাটি আটকানোর সাহায্য করে এক প্রকার বাঁধের মত।
বঙ্গে যখন পলি মাটির অঞ্চল বারতে থাকে, ফসল উৎপাদন সহজ হয়, তখন উত্তর থেকে আসে তিব্বত এলাকার জাতি, উপজাতি আর দক্ষিন থেকে আসে দ্রাবিড় জন গোসটি। যদি ধরা প্রকৃত বঙ্গ বাসিন্দা কারা তবে সহজেই বুঝা যায় এই কঠিন মিশ্র জন এলাকার গঠন।
পিরামিড তন্ত্র
গিনি
এক যুগে পৃথিবী জুরে পিরামিড কবর নির্মাণ প্রচলিত ছিল।
কিন্তু এর পিছনের গুরত্য পূর্ণ বিষয় টি জানা যায় না। বিষয়টি হইল বিপুল সময় ও অর্থ ব্যয় করে এমন অনুতপাদনশীল একটা খাত কেন এতো মাথা উচু করে দাঁড়াল?
মৃত কর্তার এমন কি শক্তি ছিল যে মৃত্যুর পরও বহু বৎসর বল বত ছিল।
হয়তো তখন যেহেতু জন হিত কর কর্ম কাণ্ডের কোনো চিন্তা ছিল না কিন্তু বিরাট অলস জন গোসটি কে ব্যস্ত রাখার জন্য ঐ সকল প্রকল্প লওয়া হইত।
এই অহেতুক ব্যয় জীবিত কর্তাদের সিংহ সনে থাকার ব্যবস্থা ছিল মাত্র।
শেল শক
গিনি
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পড় যে সকল সৈন্য ঘরে ফিরে তাদের মধ্যে বেশির ভাগই না না রকম মানসিক ও শারীরিক অস্থতায় পরে। ইহার মধ্যে একটি ছিল যা মানসিক ও শারীরিক দুইটির এক সঙ্গে যুক্ত যাকে বলা হত "শেল শক"।
প্রতি যুদ্ধের পড় এমন অবস্থা হবেই বলে জানা তার পরও দেশে এবং জাতিতে যুদ্ধ একটি নিত্য ব্যপার।
অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পোর্ট লদারদেল এ যে হত্যা হয় তাহাও এক প্রকার শেল শক। যুক্তরাষ্ট্রের এক বিরাট সৈন্য বাহিনী বিভিন্ন আঞ্চলে যুদ্ধ রত, তাই ধারনা করা যেতে পারে যে এক বিরাট আংশ এই রুপ মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় আছে।
এখন ধারনা করা যায় যে পৃথিবীর ইতিহাস পূর্ণ শধুই যুদ্ধ, তা হলে এই মানসিক ব্যধির ব্যাপ্তি কত!
আহব্বান
গিনি
১৯৭১ ইং এর ২৩, ২৪, ২৫ শের রাত্রি যারা ঢাকায় ছিলেন তারা জানেন সেই লোম সজাগ করা জনতার একাত্য প্রকাশের যে চিৎকার আর আহব্বান তাঁর বর্ণনা এক কঠিন বিষয়। কখনো মতিঝিল, কখনো নাখাল পাড়া, কখনো গোপীবাগের মোর, কখনো কমলাপুর, কখনো শান্তিনগর পুলিশ লাইন সেই ধবনি, "জাগো, জাগো, বাঙ্গালী জাগো"। কি তাঁর তেজ, কি তাঁর শক্তি, যারা শোনেন নি বা দেখেন নি তাদের কাছে কথায় বলা দুষ্কর। স্বল্প লেখা টি তাঁর প্রায়াস।
দূয়ারের ওপারে সড়কে আজ আর্তনাদ, আহব্বান ভেসে আসে। শরীর হয় তপ্ত, চঞ্চল হয় মন। দরজা খুলে যোগ দেয় মিছিলে দলে দলে। ধ্বনি উঠে মুহুর মুহু। বাঁচার তাগিদে এই দল, এই আহব্বান। এখানে ভেদা ভেদ নাই ধর্মে, বর্ণে, চেহারায়, ভাষায়, জাতিতে।
সবাই চায় সঠিক ভাবে বাচতে।শিশুর জন্য চায় সরল জীবন।
এদের নাই অস্ত্র, নাই যুদ্ধের প্রস্তুতি।তবুও এরা মরিয়া। জীবন যায় যাক, এরা চায় একটু শান্তিময় কাল। সকলের জানা বিপক্ষ এক মহা সামরিক বাহিনী তখনকার আধুনিক অস্ত্রে প্রস্তুত। তবু ভয় হীন।
দৃরতায় মিছিল বড় হয়। যত হাটে তত বড় হয়। এ শক্তিতে শুধু সিংহাসন নয় পুরা বিশ্ব উলটানো যাবে। এ মিছিলে কে নেই যার ভাষা বাংলা, শ্রমিক, কবি, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, ছাত্র, রাজনীতিবিদ , বৃদ্ধ, যুবক, নারী, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, হিন্দু, মুসলমান জনতার একত্র শক্তি গারবে এক নতুন পতাকা।
স্বাধীনতা অর্পণ
গিনি
`আয় বাবা আয়,
দুধ, কলা, আম ভাত খাই|
তুই কত আদরের ধন,
কত সাধনার পণ,
তোর লাগি এ বাঁচার খন|`
দরজায় খট খট|
`কে এমন সময়, কোন পট!
একি এতো শেখের ব্যাটা,ভাসু,
সিকদার,মনি,ফনি,নজরুল,তাজুল মনসুর,
পাড়ার আর কতক যুবক
যারা সারাদিন করে ঘুর ঘুর|`
`মাগো, মগের খবর তো সব জানো,
তবে তোমার পোলারে চাই,মানো|`
`না বাবা, না,
অনেক কস্টের ধন,
বাঁচতে চাই এড়ে লয়ে,
এড়ে ছাড়ো, লও অন্য জন|`
`আজ যদি মগেরে না ঠেকাও,
অত্যাচারে কখন কারে মুখ দেখাও!
লবে কেড়ে সব,
বন্ধ হবে রব,
শোননাই ঐ পাড়ার ঐ,
পাগল পিতা খোঁজে
কৈশোরী মেয়ে গেল কৈ|
দু-দিন পর মোরা
পাই তার উলংগ শব
নদীর কিনারে আর বালা জোরা|
মগ লয়েছ যত
মাঠের ফসল,
কৃষকের ঘামের ফল|
নেবে কেড়ে,যদি না রুখ তারে,
নেবে কেড়ে, সুযোগ যদি পায় বারে বারে|
তাই এমন তরুন চাই
জন্মভূমিকে বাঁচাতে দ্বিধা নাই|`
`মাগো আমি যাবো,
মগের সকল শক্তি ধ্বংস করে দেখাবো,
যাবো আমি, শেখের ব্যাটার সাথি হবো|`
তরুন,যুবক,আধা যুবক হাঁকে,
মগদের রুখে ঝাঁকে ঝাঁকে|
গুলিতে লুটায় কত নবীন,
জীবিত এখন তাদের একদল, প্রবীন
স্মৃতিতে আনে সে সকল দিন,
ভাবে সেই মা র মনে সেদিন,
কি সুখের নিবাস ছিলো আসিন,
স্বীয় সুখ-আনন্দ ত্যাগি,
আদরের পুত্ররে দিয়ে বিসর্জন
শত কোটি মায়েরে
একালে দিলো `স্বাধীনতা অর্পণ`!
আদি কালের যাত্রা
গিনি
এরা যাযাবর। একস্থানে বেশী দিন থাকতে পারেনা। কারণ মাঠের ঘাস শেষ, অতি ঠাণ্ডা, জলের অভাব, খাদ্য পাওয়া দুষ্কর। তপ্লি তল্পা, সহ ঘোরা, ছাগল, ভেরা, মুরগী সব নিয়ে দুর্গম এলাকা পারি দেয়। এদের শিক্ষার বিষয় ছিল শুধু প্রকৃতি অবস্থা বিবেচনা করা আর সে মত নিজের জীবন রক্ষা করার উপায়। যখন খাদ্য উতস্য শেষ তখন চলার শুরু। এই যে চলার ধারা এর জন্য এরা প্রক্রৃতির খুব কাছে ছিল। এরা জানতো কোন সময় কি হবে, কোথায় মিথা জলের স্রোত, কোথায় বিপদ স্থায়ী। কত চ্রাই, উতরাই, দিঘী, নালা, বরফ, বন, পাহার, সমতল এরা পারি দিত এবং কোথা থেকে কোঠায় বাঘেড় ভয় শব এড়া ওটী সহজেই ধারণা করতে সিদ্ধ ছিল। ধর্ম ছিল অজানা শক্তি মানের গুন গাওয়া। যেমন, সূর্যের, বা ঝড়ের কাছে সমর্পণ করা। এদের ওষুধ ছিল গাছ গাছালির রস, গরম জল, তাড়ির কষ, পোড়া মাটি বা লৌহের ছ্যেকা।
এরা বিশ্বের সব অঞ্চলে ছিল, ছিল বঙ্গেও।
বয় বৃদ্ধ জ্ঞানী দলের আগে চলে। হাল্কা কণ্ঠে ধুন তোলে পিছনে সবাই সুর ধরে। এভাবে চলার কষ্ট কম হয়। সকল বিপদ থেকে রক্ষা এবং ভালো স্থানের সন্ধান যাতে তাড়াতাড়ি পায় তার আর স্রষ্টা কে প্রশংসা করার গান।
মুখ্য গায়,
" কে নিবে রে?
দয়াময় যে।
কোথায় নিবে সে?
ফলের বাগে।
কেন বাচাবে?
তারে মানি তাই।
ঐ দেখা যায়,
ঐ দেখা যায়,
আর দেরি নাই,
আর দেরি নাই,
চালা পা চালা ভাই।"
যাত্রা
গিনি
চৈতন্য তাহার নিজ ধর্ম বিশ্বাস প্রচারের বহু চেষ্টা করিলেন। পরে তিনি তাহার শিস্য দের নিক্ত প্রায়ই জানতে চাইতেন তিনি পূর্বে কি ব্যাখা দিয়াছেন বা কাহার প্রতি ভক্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়াছেন। শিস্যদের উত্তর হতাসা জনক হইত কারন তাহারা মনে করিতে পারিত না।
তিনি গবেষণায় বসিলেন এবং চিন্তা করিয়া বাহির করিলেন, যে যদি একই কথা সুর করিয়া, ছন্দে, গান বাজনার সাথে উপস্থাপন করা যায় তাহা সকল হ্রদয়ে দীর্ঘ কাল গাঁথা থাকে।
এই সূত্রে তিনি রুকমনি সাজিলেন এবং গান বাজনা করিয়া তাহার ধর্মের গৌরবের বিষয় গুলি বলিতে লাগিলেন।
পরবর্তীতে ইহাই দখিন পূরব ভারতে "যাত্রা" বলিয়া ব্যপক বৃদ্ধি পাইলো।
ভবানিচরন বন্ধোপধ্যায় ১৮২৩ সালে বাংলায় এক খানি বই লেখেন নাম, “কলিকাতা কমলালয়”।
সেখানে দেখান বড় শহরে আসলে বিদেশী বা গ্রাম থেকে আসা ব্যক্তি দের কেমন অসুবিধা হয় শহরের আচার ব্যবহারের সাথে খাপ খাওয়াতে। ভাষার একটা বিরম্বনা থাকে, এ ছাড়া চলা চলের আসুবিধা থাকে আর গুরুত্ব পূর্ণ হল শহরের জনগণ বাহিরের জনগণকে হেয় মনে করে। সেই পুস্তকে তিনি কিছু শব্দের উৎপত্তি দেখান যে গুলি বাহির অঞ্চলের বিশেষ করে পারস্য, আরব ও ইংরেজ দের জন্য বাংলায় আসে। যেগুলা কে বলা হত যবনিক ভাষা। কিছ শব্দ উদাহরণ দেওয়া গেলঃ
যবনিক সাধু
কনিন ক্ষুদ্র, সামান্য
কল যন্ত্র
কলম লেখনি
কসম শপথ
কসাই গধু
কসবি বেস্যা, গণিকা
খয়রাত বিতরন, দান
গরম উষ্ণ
জঙ্গল বন
ঝাঁক সমূহ, বিস্তর
বঙ্গে সংস্কৃতির এক অংশ
গিনি
সংস্কৃতি হইল সংস্কার হইতে। অর্থাৎ যত রকম আচার ব্যবহারের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন আসে সেই গুলি পরবর্তীতে সংস্কৃতি বিবাচিত হয়। সেই রুপ বঙ্গেও বহু বার সংস্কৃতির রুপ ভিন্ন ভাবে দেখা গেছে। উল্লেখ্য যে , ৮০০ শতাব্দি হইতে ভারতে তুরকি দের আগমন শুরু হয় তাদের সাথে আসে সুফি মতবাদিরা। এরা দ্রুত ভারতের প্সহিম হইতে পূর্বে প্রায় স্থায়ী নিবাস গড়েন ও বাংলার সংস্কৃতে পরিবর্তন আনেন। পরবর্তীতে তাদের সময়ের গল্প, কবিতা, জীবন বৃতান্ত ও অন্য রচনা গুলি এখন পীর সাহিত্য বলে অনেকে নাম করন করেন। এ বিষয়ে একটি বই “বাংলা পীর সাহিত্যের কথা,” ডক্টর গিরিন্দ্র নাথ দাস, ১৯৭৬ ইং প্রকাশ করেন সেখান বিস্তারিত আলোচনা আছে। বাংলার বাহিরের জনগণের আসা যাওয়ার কারনে এর সাহিত্য ভান্দার প্রসার লাভ করে সাথে সাথে ভাশার অনেক তারতম্য ঘটে। ঐ পুস্তকে শ্রী গিরিন্দ্র নাথ লিখেছেন যে পীর সাহিত্য কে চার ভাগে ভাগ করা যায়, পিড় লোক কথা, পিড় কাব্য, পীর জীবনী গদ্য রচনা, পীর নাটক। সেখানে তিনি অপর একটি বিষয়ে লিখেছেন যে , এটা অঙ্কে সময় “মঙ্গল সাহিত্য” বলা হয়েছে যা গতানুগতিক মঙ্গল সাহিত্য থেকে পৃথক কারন সাধারন ভাবে মঙ্গল সাহিত্য হয় এমন লেখা যা এক মঙ্গলবার থেকে শুরু করে অন্য মঙ্গলবারে শেষ হয়, কিন্তু পীর লেখনি গুলা ছিল শুধু মানুষ কে সঠিক পথ দেখানো বা মানুষের উপকারের জন্য । দৈনিন্দিন জীবনের চলার পাথেয় হিসাবে। সাধারন ভাবে দেখা যায় এক সময় কার বারো মাসে তেরো পারবন যা অর্থনৈতিক কারনে জরুরী ছিল সেখানে ভাটা পরে, তত পরিব্রতে অন্য আচার আচরন স্থান লয়। এই প্রভাবের ফলে মানুষের খাওয়া দাওয়া, বস্ত্র, বাড়ি ঘর নির্মাণ অনেক কিছু নূতন রুপ পায়। কিছু ক্ষেত্রে যাতায়াত এবং পরিবেষ পরিচ্ছন্ন হয়। বিদেশী ব্যবসা বৃধি পায়। শিক্ষা ও প্রসার লাভ করে। এল্কা ভিত্তিকে সংখ্যা গরিষ্ঠ সংখ্যা লঘু হয়।
পুস্তকে আরও বলা আছে যে, হজরত বাইজির বোস্তামি, খাজা মোইনুদ্দিন চিস্তি, হজরত শাহজালাল, হজরত বাব অদহম শহীদ, হজরত গোরাচাঁদ বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
দয়া করে নিচের লিঙ্ক কিল্ক করুন
`আয় বাবা আয়,
দুধ, কলা, আম ভাত খাই|
তুই কত আদরের ধন,
কত সাধনার পণ,
তোর লাগি এ বাঁচার খন|`
দরজায় খট খট|
`কে এমন সময়, কোন পট!
একি এতো শেখের ব্যাটা,ভাসু,
সিকদার,মনি,ফনি,নজরুল,তাজুল মনসুর,
পাড়ার আর কতক যুবক
যারা সারাদিন করে ঘুর ঘুর|`
`মাগো, মগের খবর তো সব জানো,
তবে তোমার পোলারে চাই,মানো|`
`না বাবা, না,
অনেক কস্টের ধন,
বাঁচতে চাই এড়ে লয়ে,
এড়ে ছাড়ো, লও অন্য জন|`
`আজ যদি মগেরে না ঠেকাও,
অত্যাচারে কখন কারে মুখ দেখাও!
লবে কেড়ে সব,
বন্ধ হবে রব,
শোননাই ঐ পাড়ার ঐ,
পাগল পিতা খোঁজে
কৈশোরী মেয়ে গেল কৈ|
দু-দিন পর মোরা
পাই তার উলংগ শব
নদীর কিনারে আর বালা জোরা|
কি কব লজ্জার কথা
মোরা এতো জোয়ান
পারিনি ঠেকাতে সম্ভ্রম যথা।
মগ লয়েছ যত
মাঠের ফসল,
কৃষকের ঘামের ফল|
আজ লয়েছে বৃদ্ধের
কিশোরী কন্যা, কাল
লবে মোর বোন,
আমার আছে কি বল।
নেবে কেড়ে,যদি না রুখ তারে,
নেবে কেড়ে, সুযোগ যদি পায় বারে বারে|
তাই এমন তরুন চাই
জন্মভূমিকে বাঁচাতে দ্বিধা নাই|`
“ রক্ত যখন দিয়াছি, তখন রক্ত
আরও দিব, তবু এদেশের মানুষকে
মুক্ত করে ছারবো, ইনশেয়াল্লাহ”।( ১৯৭১ ইং এর
৭ই মার্চ, শেখ মুজিবর রহমানে কাল জয়ী
বক্তৃতার অংশ)।
`মাগো আমি যাবো,
মগের সকল শক্তি ধ্বংস করে দেখাবো,
যাবো আমি, শেখের ব্যাটার সাথি হবো|`
তরুন,যুবক,আধা যুবক হাঁকে,
মগদের রুখে ঝাঁকে ঝাঁকে|
গুলিতে লুটায় কত নবীন,
জীবিত এখন তাদের একদল, প্রবীন
স্মৃতিতে আনে সে সকল দিন,
ভাবে সেই মা র মনে সেদিন,
কি সুখের নিবাস ছিলো আসিন,
স্বীয় সুখ-আনন্দ ত্যাগি,
আদরের পুত্ররে দিয়ে বিসর্জন
শত কোটি মায়েরে
একালে দিলো `স্বাধীনতা অর্পণ`!
জাদু’ এবং ‘বাস্তবতা’ দুটি আলাদা বিষয়। জাদুর সঙ্গে বাস্তবতার বিস্তর ফারাক। কিন্তু এ দুটি বিষয় এক হয়ে সাহিত্যে নতুন আবেদন সৃষ্টি করেছে। যার ইংরেজী নাম ‘ম্যাজিক রিয়ালিজম’। বাস্তবতার সঙ্গে জাদুর কিংবা জাদুর সঙ্গে বাস্তবতার সংমিশ্রণে বিশ্বাসযোগ্য ধারণা তৈরি না-ও হতে পারে। তবে তা পাঠকের বোধকে জাগ্রত করতে পারে। কেননা সাহিত্যে জাদুবাস্তবতা এমন এক রীতি যা সবসময় দ্ব্যর্থক এবং বিভ্রান্তিকর।
এই জাদুবাস্তবতা আসলে কী? এ সম্পর্কে ম্যাক্সিকান সাহিত্য সমালোচক লুই লীল বলেছেন, ‘আপনি যদি ব্যাখ্যা করতে পারেন এটি কি, তাহলে তা জাদুবাস্তবতাই নয়।’ অর্থাৎ জাদুবাস্তবতা এমন এক বিষয় যা ব্যাখ্যা করা সহজ নয়। বর্তমান বিশ্বসাহিত্যে জাদুবাস্তবতা এক উজ্জ্বল সত্য, অত্যাধিক জনপ্রিয় এবং প্রচুর আলোচিত উপাদান। তবে এ নিয়ে ভুল ব্যাখ্যাও অনেক। অনেকেই ভুল বিষয়কেও জাদুবাস্তবতা বলেন। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, লেখায় উপস্থাপিত ঘটনাটি ঘটবে জাদুর মতো, মুহূর্তের মধ্যে। কিন্তু যারা অনুভব করবেন; তারা এমন কিছু পাবেন, যা থেকে বোঝা যাবে তার মূলে একটি গভীর সত্য রয়েছে। যেখানে কোন প্রশ্নের অবকাশ নেই বরং এটি একটি চরম বাস্তবতা।
জাদুবাস্তবতার উৎপত্তি কোথায়? একটু যদি খেয়াল করি মধ্যযুগে রচিত মঙ্গলকাব্যগুলোর দিকে। চ-ীমঙ্গলে উল্লিখিত ‘কালকেতু উপাখ্যানে’ কি এর সন্ধান পাই? কেননা দেবী একেক সময় একেক রূপ ধারণ করেছেন। হতে পারে জাদুবাস্তবতারই রূপান্তর। যদিও মঙ্গলকাব্যকে ধর্মীয় আখ্যান বা পৌরাণিক ঘটনা বলা হয়েছে। এছাড়া আরব্য রজনীর কাহিনীতেও কি জাদুবাস্তবতার সন্ধান মেলে? তারপরও আমাদের ঔপনিবেশিক চিন্তাতে সাহিত্যের যেকোন বিবর্তনে পারস্য বা ইউরোপীয় সাহিত্যের শরণাপন্ন হতে হয়।
সাহিত্য সমালোচকরা বলেছেন, জাদুবাস্তবতা কথাটি প্রথম উল্লেখ করেন ফ্রানৎস রোহ। তিনি জার্মান চিত্রকলা বিষয়ক একজন সমালোচক। তিনি ১৯২৫ সালে ‘এক্সপ্রেসিওজমুস : মাগ্রিশের রেয়ালিজমুস : প্রোবলেমে ডের নয়েস্টেন অয়রোপেইশেন মালেরাই’ অর্থাৎ ‘এক্সপ্রেশনিজমের পর ম্যাজিক রিয়ালিজম : নবীন ইউরোপীয় চিত্রকলার সমস্যাবলী’ বইতে এ কথার প্রথম সূত্রপাত করেন। রোহ বলেছেন, ‘জাদুবাস্তবতা পরিমিত ও সুস্পষ্ট লক্ষ্যাভিমুখী। এটি আবেগহীন এবং ভাবালুতামুক্ত। তাই শিল্পী দৃষ্টি রাখবেন ছোটখাটো গুরুত্বহীন বিষয়ের প্রতি। যা অস্বস্তিকর হলেও নিঃসঙ্কোচে তুলে ধরবেন। এর কাঠামো স্থির, ঘনবদ্ধ, কাঁচে ঘেরা স্থানের মতো। এটি শ্বাসরুদ্ধকর। গতিময়তার পরিবর্তে স্থিতিশীলতাই কাম্য। এর চিত্রাঙ্কন পদ্ধতি সম্পূর্ণ নতুন। আগের কোন ছবি বা হস্তশিল্পের ছাপ তাতে থাকবে না। এতে থাকবে বস্তুজগতের সঙ্গে এক নতুন আধ্যাত্মিক সম্পর্ক। সে অনুযায়ী, জাদুবাস্তবতা হচ্ছে পোস্ট-এক্সপ্রেশনিস্ট চিত্রকলার সমার্থক।
জাদুবাস্তবতার উদ্ভব যদি চিত্রকলার মাধ্যমে ঘটেও থাকে; তবে এর বিকাশ ঘটেছে সাহিত্যেই। কেননা চিত্রকলার ভাষা বা বার্তা সাধারণের বোধগম্য নাও হতে পারে। সাহিত্য অন্তত সাধারণের মনের চাহিদাকে উপলব্ধি করতে পারে কিংবা সাধারণও সাহিত্যের ভাবাবেগ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হতে পারেন। কেননা ম্যাগি এন বাউয়ার্সের মতে, ১৯৫৫ সালে এ্যাঞ্জেল ফোর্স ‘আমেরিকান স্প্যানিশ উপন্যাসে জাদুবাস্তবতা’ শীর্ষক প্রবন্ধে এর কথা সাহিত্যরীতি হিসেবে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করেছিলেন। আর উইকির মতে, জাদুবাস্তবতা এমন এক ধরনের সাহিত্যরীতি যাতে জাদুর উপকরণ অপরাবাস্তব জগতের অপরিহার্য অংশ। যে রীতি চলচ্চিত্র এবং চিত্রকলায়ও ব্যবহৃত হয়। লেখক আলেহো কার্পেন্তিয়ার ‘এল রেইনো দে এস্তে মুন্দো’র ভূমিকায় বলেছেন, ‘জাদুবাস্তবতা পাঠকের কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত একটি জিনিস গল্পে নিয়ে আসে।’ জাদুবাস্তবতার গডফাদার মার্কেজ বলেছেন, ‘আমরা যে বাস্তবকে দেখি, তার পেছনে যে ধারণাটা আছে সেটাই জাদুবাস্তবতা।’
সহজভাবে বলা যায়, বাস্তব পার্থিব কাঠামোর সঙ্গে ফ্যান্টাসির উপাদান মিলে তৈরি হয় জাদুবাস্তবতা। এটি এমন একটি জাদুময় অনুভূতি, যাতে মনে হবে যেকোন কিছুই ঘটা সম্ভব। তবে এ রীতিকে প্রায়ই মেলানো হয় পরাবাস্তব, অতিপ্রাকৃত, উদ্ভট, রূপকথা, আজগুবি ঘটনার সঙ্গে। কেননা শুধু জাদু সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে গল্প বললেই সেটি জাদুবাস্তবতা নয়। লিন্ডসে মুরের মতে, জাদুবাস্তবতা স্বাভাবিক ও আধুনিক পৃথিবীর মানুষ আর সমাজের বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনার প্রেক্ষাপটে স্থাপিত। তাই রূপকথা, লোকসাহিত্য, পুরান বা মিথ, ভৌতিক বা হরর গল্পও জাদুবাস্তবতা নয়। তবে বিশেষ কোন কিংবদন্তি জাদুবাস্তবতা বলে গণ্য হতে পারে। জাদুবাস্তবতা মহাকাশ কিংবা এলিয়েন কোন গ্রহকে ঘিরে লেখা হয় না। আলবার্তো রাইওর মতে, জাদুবাস্তবতায় জাদু শব্দের আরেকটি অর্থ ‘বিস্ময়কর’ যা বাস্তবতাকে বিশেষভাবে প্রতিপন্ন করে, বাস্তবতাকে বিকৃত বা প্রতিস্থাপন করে না।
জাদুবাস্তব গল্পের কাহিনী যে কোন বাস্তব জায়গার পটভূমিতে গড়ে উঠতে পারে। জাদুবাস্তব গল্পের অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে অদ্ভুত বা চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য। সেটা সময়, স্থান বা চরিত্রের মধ্যে মিশে থাকতে পারে। জাদুবাস্তব কাহিনীর মূল বৈশিষ্ট্য হলো- এতে দৈনন্দিন ঘটনাবলী এমনভাবে তুলে ধরতে হবে, যাতে অসাধারণ সব ঘটনা ঘটতে থাকবে। গল্প বলার সময় হঠাৎ ‘সময়’ থমকে দাঁড়াবে, আবার চলতে আরম্ভ করবে। জাদুবাস্তবতায় গল্প বলার স্বরভঙ্গিটাই সব।
✨ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
◻ ◻ জননী বাংলা সাহিত্য সংসদ — 'জবাসাস'
একটি অরাজনৈতিক, শিক্ষা, সাহিত্য ও সেবামূলক সজিব সংগঠন। সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি সেবামূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণই সংগঠনের প্রতিপাদ্য।
➡ " সাহিত্য চর্চায় কর মনোনিবেশ,
বাঁচাও সাহিত্য,বাঁচাও দেশ। "
এই বিশুদ্ধ চর্চাই সংগঠনের পাথেয়। তরুণদের নিয়ে আগামীর সুষ্ঠু সমাজ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে সংগঠনের পথযাত্রা। এখানে হয়তো ভুলের পর ভুল হবে কিন্তু এক একটি ভুলই হবে আমাদের শিক্ষক ।
➡ তাই কাব্যের ভাষা বলতে চাই-
ভুল ভুল বলে কেন
থাকবো সদা নিশ্চুপ?
ভুল হতে শিখবো সদা
লভিব নব্য রূপ।
◻ ◻ আমাদের মৌলিক কার্যক্রম মূলত চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত । যথা–
◼ শিক্ষাঃ শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা ব্যতীত কোন দেশ বা জাতি উন্নয়নের পথে হাটতে পারে না । মেরুদণ্ড ছাড়া যেমন মানুষ সোজা হয়ে দাড়াতে পারে না, হাঁটতে পারে না, চলাচল করতে পারে না; তেমনি শিক্ষা ব্যতীত কোন জাতি নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারে না। বলা হয় থাকে, যদি কোন দেশ বা কোন জাতিকে ধ্বংস করতে চাও, তবে প্রথমে সে জাতি বা দেশের শিক্ষাকে ধ্বংস করে দাও। তাহলে অতি সহজে সে দেশ বা জাতিকে ধ্বংস করতে পারবে। শিক্ষার গুরুত্ব সম্বন্ধে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন,
➡ "আমার পরে সবচেয়ে বড় দানশীল সে , যে কোনো বিষয়ে জ্ঞান লাভ করলো , অতপর তা ছড়িয়ে দিলো । [ বায়হাকী ] "
শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়বস্তু নিম্নরূপঃ-
▶ একাডেমিক শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদেরকে অধিক আগ্রহী করে তুলা।
▶ বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
▶ নৈতিকতার শিক্ষা সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া।
▶ এছাড়াও সংগঠনের সাধ্যানুযায়ী শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহনে 'জবাসাস' সর্বদা সচেষ্ট থাকবে ইনশা আল্লাহ।
◼ সাহিত্যঃ মানুষের দর্শন,বিজ্ঞান, ধর্মনীতি, অনুরাগ-বিরাগ, আশা, নৈরাশ্য, তার অন্তরের সত্য ও স্বপ্ন — এসবই সাহিত্য । দর্পনে যেমন আমাদের পূর্ণাঙ্গ মুখচ্ছবি প্রতিফলিত হয়, তেমনি সাহিত্যেও একটি জাতির পরিপূর্ণ চিত্র ফুটে উঠে। সাহিত্য কেবলমাত্র কবির কবিতা ও সাহিত্যিকের রচনা নয়, এটি একটি জাতির সংস্কৃতিরও ধারক।
➡ " সাহিত্য চর্চায় করো মনোনিবেশ,
বাঁচাও সাহিত্য, বাঁচাও দেশ ।
এই বিশুদ্ধ চর্চাই সংগঠনের পাথেয়। সাহিত্য একটি ধারালো অস্ত্রের মতো। যদি কোন ভালো মানুষ তাকে অর্জন করতে পারে তবে সে এ দ্বারা সমাজের সকল নষ্টামির গর্দান উড়িয়ে দেয়। আর কোন মস্তিষ্কবিকৃত মানুষের হাতিয়ার হলে সে সমাজকে নষ্টামির অতল গহ্বরে নিমজ্জিত করে ফেলে। সাহিত্য— ফিলহালে কাঁটাভরতি এক বাগানের মতো, আমরা সেই বাগানের কাঁটাগুলোকে উপড়ে ফেলতে আমরা সদা প্রস্তুত। সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজে নৈতিকতার প্রভাব বিস্তার করতে আমরা দুঃসহ । সাহিত্য বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়বস্তু নিম্নরূপঃ-
▶ সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করা ।
▶ সংগঠনের পক্ষ থেকে লেখার মান যাচাইয়ের ভিত্তিতে তা পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে প্রকাশ করা।
▶ বিভিন্ন সময় সাহিত্য আসরের আয়োজন করা।
▶ এছাড়াও সংগঠনের সাধ্যানুযায়ী সাহিত্য বিষয়ক বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহনে 'জবাসাস' সর্বদা সচেষ্ট থাকবে ইনশা আল্লাহ।
◼ সেবামূলক কর্মকাণ্ডঃ অন্যের ব্যথায় সমব্যথী হওয়া এবং পরের বিপদে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা একটি মহৎ গুণ। এক ধরনের নেকীর কাজ। হিতৈষী মনোভাব ও সহমর্মিতার গুণ ছাড়া মানবিকতা ও মহানুভবতার বিকাশ পূর্ণতা পায় না।
➡ ‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’
আমি তিনবেলা পেট পুরে খেতে পারি। একাধিক পদের তরকারি ছাড়া আমার খাবার রোচে না। বিচিত্র স্বাদ আস্বাদন ছাড়া আমার রসনা তৃপ্ত হয় না। বাসার নৈশ প্রহরী কুকুরকে নিত্য টাটকা গোশত খাওয়াই। দুই বেলা শাহী খাবার খেতে দেই। শ্যাম্পু ছাড়া ওর গোসল হয় না। অথচ পাশের বস্তিতে/বাড়িতে খাবার না পেয়ে অবোধ শিশুরা চিৎকার করে কাঁদে। জঠরজ্বালা সইতে না পেরে কত বনী আদম পথের ধারে উপুড় হয়ে কাতরায়। ফল-ফ্রুটস খেতে খেতে আমার আদরের দুলালের অরুচি ধরে যায়। অথচ বাড়ির বুয়ার অভুক্ত সন্তানদের মুখে মৌসুমী ফলটি পর্যন্ত ওঠে না। ক্ষুদে মাছির লঘু পদভার পড়ামাত্র সুডৌল আপেল, রসে টইটুম্বর আঙ্গুর ও টসটসে কমলা ওরা প্রায়শই নিক্ষেপ করে ডাস্টবিনে। অথচ এরা পঁচা ও উচ্ছিষ্ট ফল খাওয়ার জন্য ইতর প্রাণীর সঙ্গে যুদ্ধ করে ডাস্টবিনে। ফ্যাশন বদলের সঙ্গে সঙ্গেই আমার মেয়ের শীতবস্ত্র আর গ্রীষ্মের পোশাক বদল হয়। অথচ অদূরের গাঁয়েই কি-না শীতবস্ত্রের অভাবে গরীবের প্রাণ যায়।এসব তো বিবেক বা মানবতার পরিচায়ক নয়। অমানবের চেয়ে মানব শ্রেষ্ঠ কেন? প্রাণের কারণে? কেবল বুদ্ধির কারণে? মোটেও না। প্রাণের বৈশিষ্ট্যে মানুষ ও জীব-জন্তু প্রায় অভিন্ন। মানুষ বুদ্ধিমান জীব বলে অন্য সব জীবজন্তু একেবারে বুদ্ধিহীন নয়। বরং বুদ্ধির সঙ্গে বিবেক এবং আপন চাহিদার সঙ্গে মানবিকতার সংশ্লেষই অন্য সব জীব-জন্তুর ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছে। ইসলাম এ কারণে মানব সমাজে এমন বৈষম্য ও প্রভেদের কোনো সুযোগ রাখে নি। ইসলাম মানুষকে সর্বোচ্চ মানবিকতা, পরহিতৈষণা, সহমর্মিতা ও মহানুভবতার শিক্ষা দিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাঁর নবীকে প্রেরণ দয়া ও সহমর্মিতার প্রতীক হিসেবে।
➡ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُصَّدِّقِينَ وَٱلۡمُصَّدِّقَٰتِ وَأَقۡرَضُواْ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا يُضَٰعَفُ لَهُمۡ وَلَهُمۡ أَجۡرٞ كَرِيمٞ ١٨﴾ [الحديد: ١٨]
‘নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম করয দেয়, তাদের জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।’ [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত : ১৮]। সেবামূলক বিভিন্ন কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম নিম্নরূপঃ
▶ সাধ্যমত গরিব, দুঃখি ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্ঠা।
▶ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাধ্যমত ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্ঠা।
▶ দরিদ্র শিক্ষার্থী ও পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর তাগিদে যথাযথ পথ অবলম্বন করা। সর্বোপরি মানব কল্যাণ নিজেদের উৎসর্গ করা।
▶ এছাড়াও সংগঠনের সাধ্যানুযায়ী সেবামূলক বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহনে 'জবাসাস' সর্বদা সচেষ্ট থাকবে ইনশা আল্লাহ।
◼ স্বদেশ প্রেম উদ্বুদ্ধ করাঃ মানুষের মধ্যে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে যতগুলো সৎ গুণাবলি বিরাজমান, তন্মধ্যে দেশপ্রেম অন্যতম। স্বদেশপ্রেম হচ্ছে নিজ জন্মস্থানের প্রতি ভালোবাসা। প্রকৃতপক্ষে স্বদেশপ্রেম মানবজীবনের মূল্যবান সম্পদ এবং সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষমাত্রই তার পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন সর্বোপরি তার স্বদেশকে জন্মগতভাবেই ভালোবাসে। জীবন-জীবিকার প্রয়োজন ও কর্তব্যের টানে বিদেশে বসবাস করলেও মানুষ জন্মভূমি তথা মাতৃভূমির মায়া-মমতা ভুলতে পারে না। এসবের প্রভাব প্রতিটি মানুষের দেহ, মন ও প্রাণে বিদ্যমান থাকে। মাতৃভূমি ও জন্মস্থানের প্রতি মানুষের এ দুর্নিবার আকর্ষণ বা ভালোবাসা, ভালোলাগা, গভীর আবেগ-অনুভূতি ও মমত্ববোধকে বলে স্বদেশপ্রেম। দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করতে হলে স্বদেশপ্রেম অত্যাবশ্যক। দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ : দেশের প্রতি ভালোবাসা মানব চরিত্রের একটি মহৎ গুণ। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারলে মান-সম্মান, ঈমান-আমল রক্ষা করা যায়। ঈমানপ্রেমের মতো দেশপ্রেমও মোমিনের অস্তিত্বের অংশ। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে স্বদেশপ্রেমের কথা বলা হয়েছে। ইসলামে স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার জোরালো দিকনির্দেশনা রয়েছে। স্বদেশপ্রেম ও মাতৃভূমিকে ভালোবাসা এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য । দেশ ও দশের মঙ্গলকামনার্থে আমাদের সংগঠন সদা সর্বদা সম্মুখপানে হাটবে (ইনশাআল্লাহ)। কখনো পিছুপা হবে না আমাদের এ পথযাত্রার (ইনশাআল্লাহ) ।
⬇
বিস্তারিতঃ facebook.com/groups/jb2018 ( ফেসবুক অফিসিয়াল গ্রুপ)
facebook.com/bhorbds (প্রতিষ্ঠাতা)
একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও সুপরিচিত। বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮) বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহীদ হন। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।
আমি ভাষা আন্দোলন দেখিনি, আমি স্বাধীনতা দেখিনি। শুধু শুনে এসেছি।
শুভ জন্মদিন প্রিয় নবী ও রাসূল। হযরত মুহাম্মদ (সা:)
লাদাখের গালওয়ান উপত্যকার নাম এখন সারা বিশ্বেই বেশ পরিচিত। কারণ এটা এখন দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের সংঘাতের সর্বশেষ ফ্লাশপয়েন্টে পরিণত হয়েছে। এই উপত্যকাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং চীনের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে।
কৌশলগত দিক দিয়ে ভারত এবং চীন উভয় দেশের কাছেই এই উপত্যকাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই উপত্যকাকে ঘিরে ইতিপূর্বে একাধিকবার সংঘাতে জড়িয়েছে দেশ দুটি। সম্প্রতি আবারও সংঘাতময় অবস্থা বিরাজ করছে। সর্বশেষ চলতি মাসের ১৫ জুন সংঘাতে প্রায় ২০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছে বলে স্বীকার করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে বিশ্ব মিডিয়ার নজর এখন গালওয়ান উপত্যকার দিকেই।
কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এই উপত্যকার প্রকৃত ইতিহাস। প্রায় ১২৫ বছর আগে এই উপত্যকার নামকরণ করা হয়েছিল লাদাখেরই গোলাম রসূল গালওয়ান নামক এক কিংবদন্তী পর্বতারোহী ও অভিযাত্রীর নামানুসারে। আজকের লেখাটি সেই অজানা ইতিহাসই জানাবে।
সাধারণত, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে যেকোনো ধরনের ভৌগোলিক নিদর্শন বা স্থান দেশি অভিযাত্রীদের নামে নাম রাখার ঘটনা ছিল খুবই বিরল। তা সে পর্বতশৃঙ্গই হোক বা উপত্যকা-গিরিখাত। এই সমস্ত ভৌগোলিক স্থান বা নিদর্শনের নামগুলো ব্রিটিশ অভিযাত্রীদের নামেই করা হত।
লাদাখের ধূসর পাহাড় আর তুষারধবল শিখর দিয়ে ঘেরা রুক্ষ ও বিস্তীর্ণ পাথুরে এক ল্যান্ডস্কেপের মধ্য দিয়ে কুল কুল রব তুলে বয়ে চলেছে এক নদী। এ নদীর উৎস কারাকোরামের গিরিকন্দরে। আকসাই চীন ও পূর্ব লাদাখের মধ্য দিয়ে এ নদী প্রায় ৮০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে প্রবাহ গিয়ে মিশেছে শিয়কে। শিয়ক আবার ঐতিহাসিক প্রাচীন সিন্ধু নদীর একটা গুরুত্বপূর্ণ উপনদী।
'গালওয়ান' শব্দটি কাশ্মীরি, যার অর্থ 'ডাকাত'। গোলাম রসূল গালওয়ানের দাদা কারা গালওয়ান ছিলেন উনবিংশ শতকে কাশ্মীরের এক বিখ্যাত লুটেরা, যিনি ধনীর সম্পদ লুট করে গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। এজন্য তার খ্যাতি ছিল রবিনহুডের মতো। জনশ্রুতি আছে, তিনি একবার কাশ্মীরের রাজার শোবার ঘরে ঢুকে তার গলাতেও ছুরি ধরেন। কিন্তু রাজার সৈন্যদের পাতা ফাঁদে ধরা পড়ে যান কারা গালওয়ান। রাজার গলায় ছুরি ধরার অপরাধে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরপর আত্মক্ষার্থে তার পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যায় লাদাখে। কিন্তু ততদিনে তাদের নামের সঙ্গে স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়ে গেছে গালওয়ান বা ডাকাত শব্দটি।
১৮৭৮ সাল নাগাদ গোলাম রসূল গালওয়ানের জন্ম হয় লাদাখের রাজধানী লেহ-তে। বিধবা মা তাকে বড় করে তোলেন। কিন্তু সংসারে ছিল চরম অভাব-অনটন। মাত্র ১২-১৩ বছর বয়স থেকেই সে ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের সাথে নানা অভিযানে শামিল হতে শুরু করে। সারাদিন অভিযাত্রীদের সাথে পাহাড়-পর্বত ও বনজঙ্গলে ঘোরাঘুরি করত কিশোর গোলাম রসূল। অভিযাত্রাদেরকে পথপ্রদর্শন করত, যাত্রাপথের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোও তাকেই করতে হত। বিনিময়ে যা পেত তা দিয়েই কোনো রকম খেয়ে-পরে দিন চলে যাচ্ছিল।
গোলাম রসূলের বয়স যখন মাত্র ১২ বছর, তখন স্যার ফ্রান্সিস ইয়ংহাসব্যান্ডের দলে পোর্টার বা মালবাহক হিসেবে তার অভিযানের যাত্রা শুরু হয়। ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা তখন ঘন ঘন তিব্বত, কারাকোরাম, পামির মালভূমি বা মধ্য এশিয়ার দিকে অভিযান পরিচালনা করত। তখন কিশোর গোলাম রসূলও জুটে যেত তাদের সঙ্গে।
কিন্তু তার জীবনের এক আমূল পরিবর্তন আসে ১৮৯২ সালে। চার্লস মারের (সেভেন্থ আর্ল অব ডানমোর) সঙ্গে পামীর ও কাশগার পর্বত অভিমুখে এক অভিযানে বেরোনোর মাধ্যমে তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। ভ্রমণের একপর্যায়ে ঐ দলটি লাদাখের এক দুর্গম অঞ্চলে সুউচ্চ পর্বতশ্রেণী আর খাড়া গিরিখাতের মাঝখানে আটকে যায়। সেখান থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় ছিল না। এমনকি বের হওয়ার জন্য কোনো রাস্তাও দেখা যাচ্ছিল না।
তখন গোলাম রসূলের বয়স মাত্র ১৪ বছর। যখন সব চেষ্টা করেও অভিযাত্রিক দলটি ব্যর্থ হলো, তখন গোলাম রসূল নিজেই বেরিয়ে পড়ে সেই জটিল গোলকধাঁধার মধ্য থেকে বেরোনোর পথ খুঁজতে। আশ্চর্যজনকভাবে খাদের ভেতর দিয়ে সে বেশ সহজ এক রাস্তা খুঁজে বের করে, যার কারণে এই অভিযান কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই শেষ হয়। বেঁচে যায় অনেকগুলো প্রাণ।
দলের নেতা চার্লস মারে কিশোর গোলাম রসূলের প্রতিভা দেখে অবাক হন। তিনি এতটাই মুগ্ধ হন যে, কল কল রব তুলে বয়ে চলা যে জলাধারের পাশ ঘেঁষে নতুন রাস্তাটির সন্ধান মেলে, তার নামকরণই করে ফেলেন গোলাম রসূল গালওয়ানের নামে, যা বর্তমানে গালওয়ান নদী নামে পরিচিত। আর এই নদী থেকে গালওয়ান উপত্যকার নামকরণ হয়েছে। সেই থেকে গোলাম রসূল হয়ে ওঠেন লাদাখের ইতিহাস। শুধু তা-ই নয়, হয়ে ওঠেন ভূগোলের অংশ। পাশাপাশি উপমহাদেশে তিনিই সম্ভবত প্রথম নেটিভ যিনি কি না ঔপনিবেশিক আমলে এই সম্মান অর্জন করেন।
যে গোলাম রসূল একসময় ছিল সামান্য মালবাহক ও টাট্টু ঘোড়া চালক, সেই গোলাম রসূল একদিন লেহ-তে নিযুক্ত ব্রিটিশ জয়েন্ট কমিশনারের 'আকসকল' বা প্রধান সহকারীর পদে উন্নীত হন। তবে অভিযানে বের হয়ে পড়াটা তার নেশায় পরিণত হয়ে যায়। দারিদ্র্য আর অর্থকষ্ট মিটে যাওয়ার পরও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি যে কত অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন বা পথপ্রদর্শন করেছেন তার ইয়ত্তা নেই।
মাত্র ৪৭ বছর বয়সেই গোলাম রসূল পাড়ি জমান পরপারে। জীবনের নানা অভিযানের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি লিখে ফেলেন একটি আত্মজীবনী, 'সার্ভেন্ট অব সাহিবস' বা 'সাহেবদের ভৃত্য'। দারিদ্র্য আর অর্থকষ্টের মধ্যে বেড়ে ওঠা গোলাম রসূল খুব বেশি লেখাপড়া জানতেন না। এমনকি জানতেন না এক অক্ষর ইংরেজিও। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা তিনি কখনোই অর্জন করেননি। এরপরও কীভাবে তিনি ইংরেজিতে নিজের স্মৃতিকথা লিখলেন তারও এক মজার ইতিহাস রয়েছে।
গোলাম রসূল গালওয়ান লাদাখি, উর্দু আর তুর্কি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন। এছাড়া তিব্বতি এবং কাশ্মীরি ভাষাতেও তার সামান্য জানাশোনা ছিল। কিন্তু ইংরেজিতে তিনি মোটেও কথা বলতে পারতেন না। এরপর এক অভিযানে তিনি বেরিয়ে পড়েছিলেন মার্কিন অভিযাত্রী রবার্ট ব্যারাটের সঙ্গে। সেই অভিযান থেকেই তিনি শুরু করেন সিরিয়াস ইংরেজি চর্চা।
গোলাম রসূল যখন রবার্ট ব্যারেটের সঙ্গে অভিযানে বের হন তখন তিনি বড়জোর দশ-বারোটা ইংরেজি শব্দ জানতেন। কিন্তু ইংরেজিতে তার কথা বলা এবং লেখালেখি করার প্রবল ইচ্ছা ছিল। এ কাজে রবার্ট ব্যারেট তাকে বেশ উৎস যোগান। তাকে সাহায্য করার জন্য রবার্ট ব্যারেট তার সাথে সব সময় কেটে কেটে, ধীরে ধীরে ইংরেজিতে কথা বলতেন, যাতে করে তিনি শব্দগুলো শিখে নিতে পারেন। তাকে পড়ার জন্য দিয়েছিলেন একটি কিং জেমসের বাইবেল এবং সপ্তদশ শতাব্দীর একটি ট্রাভেল ব্যাগ। রবার্ট ব্যারেটের স্ত্রী ক্যাথরিন দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে সম্পাদনা করেছেন গোলাম রসূল গালওয়ানের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটি।
গোলাম রসূল একটানা দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নিজের ভাঙা-ভাঙা ইংরেজিতেই আত্মজীবনী নোট করেন। এরপর ডাকে করে পাঠিয়ে দিতেন আমেরিকায় ক্যাথরিনের কাছে। প্রথম প্রথম পান্ডুলিপিগুলো পুনরায় লেখার জন্য তার কাছে ফেরত পাঠানো লাগত, কারণ লেখাগুলো ছিল একেবারেই অস্পষ্ট ও অগোছালো। পরে অবশ্য ফেরত পাঠানোর তেমন দরকার হতো না। আত্মজীবনীতে তার নিজস্ব লেখার ভঙ্গিটাই বজায় রাখা হয়। অবশেষে ১৯২৩ সালে বইটি প্রকাশিত হয়, নাম 'সার্ভেন্ট অব সাহিবস - আ বুক টু রিড অ্যালাউড'।
বর্তমানে দিল্লির বিখ্যাত পত্রিকা ইকোনমিক টাইমসে সাংবাদিকতা করেন রসূল বাইলে। পারিবারিকভাবে গোলাম রসূল গালওয়ান হলেন রসূল বাইলের প্র-পিতামহ।
আজকের লাদাখ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়েছে পর্যটন খাতের সুবাদে। অথচ, এমন একটা সময় ছিল যখন লাদাখে যুবকদের আহার সংগ্রহ করার জন্য পশ্চিমা যাত্রীদের সাথে বিপজ্জনক অভিযানে বেরিয়ে পড়া ছাড়া উপার্জনের কোনো রাস্তা ছিল না। আর অভিযাত্রার পথে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো তাদেরই করতে হতো। গোলাম রসূল সেই ধারার সূচনা করে যান।
গালওয়ান উপত্যকার নামকরণের মধ্য দিয়ে গোলাম রসূলের স্মৃতি আজও অমলিন হয়ে আছে। রসূল বাইলে একদিন তার প্র-পিতামহের নামে লাদাখে নিজস্ব জমিতে একটি হোটেল চালু করার স্বপ্ন দেখেন। অবশ্য তার চাচা ইতিমধ্যেই লাদাখে চালু করে দিয়েছেন পর্যটকদের জন্য এক আধুনিক বিশ্রামাগার, যা 'গালওয়ান গেস্ট হাউজ' নামে পরিচিত।